মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক কড়াকড়ি নীতি বিদেশি পড়ুয়াদের কাছে আমেরিকাকে আর আকর্ষণীয় রাখছে না। বরং ভয় আর অনিশ্চয়তায় অনেকে আমেরিকা এড়িয়ে ইউরোপ, ব্রিটেন কিংবা কানাডার মতো বিকল্প পথে হাঁটছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি পড়ুয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। শিকাগোর ডিপল ইউনিভার্সিটিতে বিদেশি ভর্তির হার গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই খরচে কাটছাঁটের ঘোষণা দিয়েছে। ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও ৭৫৫ জন বিদেশি শিক্ষার্থী কম ভর্তি হয়েছেন।
ডিপল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যানুয়েল জানিয়েছেন, বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভিসা জটিলতায় পড়ছেন। কারও আবেদন বাতিল হচ্ছে, আবার কারও অনুমোদনে সময় লাগছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য জমা দেওয়ার নতুন নিয়মে অনেক শিক্ষার্থী আতঙ্কিত হয়ে ভর্তি বাতিল করছেন।
বিদেশি পড়ুয়ারা শুধু ডলার আয়ই বাড়ান না, গবেষণা ও উদ্ভাবনেও বড় অবদান রাখেন। এই ধারা ভেঙে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিক সঙ্কটে পড়ছে। ইতিমধ্যেই অন্তত ৩৫টি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় বাজেট কাটছাঁট করেছে। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়েছে, নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪২৫টি পদ বাতিল হয়েছে। গবেষণার জন্য বরাদ্দও কমেছে ব্যাপক হারে।
রয়টার্সকে ভারতীয় এক ছাত্রী জানিয়েছেন, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলেও ভিসার জটিলতার আশঙ্কায় ভর্তি হননি। তিনি বিকল্প দেশে পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন। চীনের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বদলে ব্রিটেনে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি কিছু মার্কিন অধ্যাপকও শিক্ষার্থীদের অন্য দেশে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই অভিবাসনবিরোধী নীতি গ্রহণ করেছে। তার দাবি, মার্কিন চাকরি ও শিক্ষা খাতে আমেরিকান নাগরিকদেরই অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের নীতির ফলে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বৈচিত্র্য হারাচ্ছে এবং বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি—যেখানে বিদেশি পড়ুয়ারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, অথচ তাদের অনুপস্থিতিতে অর্থনৈতিক ও গবেষণামূলক সঙ্কট দিন দিন গভীর হচ্ছে।